মাংলই গ্রামের রাধা-দামোদর মন্দির ও রাসমঞ্চ স্থানীয় মাইতি বংশ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। উঁচু ভিত্তিভূমির উপর স্থাপিত, দক্ষিণমুখী মন্দিরটি পঞ্চরত্ন শৈলীর ও খাঁজবিহীন রেখ ধরনের বক্রশীর্ষ শিখরবিশিষ্ট। মন্দিরের সামনে ত্রিখিলান প্রবেশপথ। গর্ভগৃহের সামনে অলিন্দ। গর্ভগৃহে প্রবেশের দুটি দরজা। একটি সামনে অর্থাৎ দক্ষিণ দিকে এবং অপরটি পূর্ব দিকে। মন্দিরের সামনের দেওয়ালে সুন্দর 'টেরাকোটা'র অলংকরণ আছে। তারমধ্যে একটি অষ্টাদশভুজা দুর্গামূর্তি অনবদ্য। মন্দিরটি ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত। গর্ভগৃহে রাধাদামোদর ( নারায়ণ শিলা ) নিত্য পূজিত। মন্দিরের দুদিকে দুটি 'দেউল' ধরণের মন্দির আছে।
এই মন্দিরের পিছনে, উত্তর-পশ্চিম কোণে একটি বড়মাপের আটকোনা ও রেখ দেউলের মত ১৭ টি ( প্রথম তলের আটকোণে আটটি + দ্বিতীয় তলের আটকোণে আটটি + কেন্দ্রীয় চূড়া ) চূড়া-বিশিষ্ট রাসমঞ্চ আছে। রাসমঞ্চটির আটদিকেই খিলানের উপরে চমৎকার টেরাকোটা অলংকরণে ( মুখ্যত কৃষ্ণলীলা ) সমৃদ্ধ। তবে বেশ কয়েকটি চূড়া ও প্রতিটি খিলান স্তম্ভে গ্রথিত বড় মাপের মূর্তিগুলি এখন ভগ্ন। টেরাকোটা সজ্জাও জীর্ণ। তবে এখনো যা আছে তাও কম নয়। রাসমঞ্চটি ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত। রাসমঞ্চে একটি প্রতিষ্ঠাফলক আছে। প্রতিষ্ঠাফলকে ইংরাজি সালের উল্লেখ কৌতুকবহ। লিপির পাঠ নিম্নরূপ :
" শ্রীশ্রী রাধা দামোদর জীউ
শুভমস্তু সকাব্দাঃ
১৭৮০ শক সন ১২৬৬ সাল ইংরেজি
সন ১৮৫৯ সাল
শ্রী ঠাকুর দাস মাইতি "
এছাড়াও রয়েছে রাম-রাবণের যুদ্ধ, গোপিনীদের সঙ্গে রাধা-কৃষ্ণ, হিড়িম্বা বধ, অর্জুনের লক্ষ্যভেদ ইত্যাদি নানা ফলক।
মন্দির চত্বর থেকে একটু দূরে রয়েছে রাধা-দামোদর জিউর রাসমঞ্চ।
রাসমঞ্চে এখন পুজোপাঠ না হলেও মন্দিরে শালগ্রাম শিলা ও শিবের পূজা হয়। গ্রামেরএক মহিলার সঙ্গে, যিনি এই মন্দিরের দেখভাল করেন, পুজো করেন । শুধু মন্দির নয়, এখানকার পরিবেশও যে মোহময়।আশপাশে ঘন জঙ্গল। নাম না জানা কত পাখি থেকে থেকে ডেকে উঠছে। জঙ্গলের বুক চিরে একটা পায়ে হাঁটা রাস্তা। শুকনো পাতা পড়ে সে রাস্তার রং লালচে। পা পড়লেই হাওয়ায় মর্মর শব্দ ওঠে। বিশাল এক গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে বুড়ো মন্দির। তার গা বেয়ে চুপচাপ ঝরে পড়ছে হলুদ পাতারা। ভাঙা পাঁচিলের ফাঁক থেকে উঁকি দিচ্ছে রাসমঞ্চ। চারিদিক নিস্তব্ধ।
কীভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে মেদিনীপুর বা পাঁশকুড়া লোকালে পাঁশকুড়া স্টেশন নামতে হবে। সেখান থেকে রাধাবল্লভপুরগামী ট্রেকারে পাটনা। রাধারানী গার্লস স্কুলের পাশ দিয়ে মোরামের রাস্তা ধরে পৌঁছে যান মংলাই প্রাইমারি স্কুল। সেখান থেকে ডান দিকের ঢালাই রাস্তা ধরে সোজা গেলেই রাধা-দামোদর মন্দির।
বাংলার_বৈষ্ণব_তীর্থপর্ব১
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন