সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

 

একদা এক গভীর বনের পাশে একটি শান্ত নদী প্রবাহিত ছিল। নদীটির তীরে ছিল একটি বিশাল বটগাছ, যার ডালপালা নদীর উপর ঝুঁকে ছিল। এই গাছে বাস করত একটি সাদা কবুতর, যার নাম ছিল শুভ্রা। শুভ্রা ছিল মিষ্টভাষী ও দয়ালু স্বভাবের, তাই বনের অন্যান্য প্রাণীরাও তাকে ভালোবাসত।
একদিন শুভ্রা গাছের ডালে বসে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করছিল। হঠাৎ তার নজরে পড়ল একটি ছোট্ট পিঁপড়ে, যা নদীর তীরে পানি পান করতে এসেছিল। পিঁপড়েটির নাম ছিল কণা। কণা ছিল পরিশ্রমী ও সাহসী, কিন্তু সেদিন তার জীবনে একটি বিপদ অপেক্ষা করছিল।
পানি পান করতে গিয়ে কণা হঠাৎ পা পিছলে নদীর স্রোতে ভেসে যেতে লাগল। সে বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিল, কিন্তু তার ছোট্ট শরীর স্রোতের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারছিল না। শুভ্রা এই দৃশ্য দেখে উদ্বিগ্ন হলো এবং ভাবতে লাগল কিভাবে কণাকে বাঁচানো যায়।
শুভ্রা দ্রুত একটি পাতা ছিঁড়ে কণার দিকে ফেলে দিল। কণা সেই পাতায় উঠে নিজেকে স্থিতিশীল করল এবং ধীরে ধীরে তীরে পৌঁছাল। তীরে পৌঁছে কণা গভীর শ্বাস নিল এবং শুভ্রার দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠল। সে চিৎকার করে বলল, "ধন্যবাদ, শুভ্রা! তোমার সাহায্য না পেলে আমি আজ বাঁচতাম না।"
শুভ্রা মৃদু হেসে বলল, "বন্ধুর বিপদে সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য। তুমি নিরাপদে আছো, এটাই আমার আনন্দ।"
এই ঘটনার পর কণা ও শুভ্রার মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। তারা প্রতিদিন একে অপরের সাথে সময় কাটাত এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করত। কণা তার দলের অন্যান্য পিঁপড়েদের শুভ্রার সম্পর্কে বলত, আর শুভ্রা অন্যান্য পাখিদের কণার সাহসিকতার গল্প শোনাত।
কিছুদিন পর, একদিন শুভ্রা খাবারের সন্ধানে বনের গভীরে উড়ে গেল। কণা তখন তার দলের সাথে খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ কণার নজরে পড়ল একটি মানুষ, যার হাতে একটি জাল। সে বুঝতে পারল, এই শিকারি বনের কোনো প্রাণীকে ধরার পরিকল্পনা করছে।
কণা শিকারির পিছু নিল এবং দেখতে পেল যে সে শুভ্রার গাছের দিকে যাচ্ছে। শুভ্রা তখনও ফিরে আসেনি, কিন্তু শিকারি গাছের নিচে জাল পাততে শুরু করল। কণা বুঝতে পারল, শিকারির লক্ষ্য শুভ্রা। সে দ্রুত একটি পরিকল্পনা করল।
কণা তার দলের অন্যান্য পিঁপড়েদের ডেকে শিকারির জুতোয় হামলা চালাল। শিকারি হঠাৎ পায়ে তীব্র ব্যথা অনুভব করে চিৎকার করে উঠল এবং জাল ফেলে দিয়ে পা চুলকাতে লাগল। এই সুযোগে কণা ও তার দল জালটি গাছের নিচ থেকে সরিয়ে ফেলল।
শিকারি ব্যথায় কাতর হয়ে বনের বাইরে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর শুভ্রা ফিরে এসে দেখল গাছের নিচে কণা ও তার দল দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, "কণা, এখানে কি ঘটেছে?"
কণা সব কিছু ব্যাখ্যা করল। শুভ্রা কণার বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতায় মুগ্ধ হলো এবং বলল, "তুমি আজ আমার জীবন বাঁচিয়েছ, কণা। তোমার এই ঋণ আমি কখনো ভুলব না।"
কণা মৃদু হেসে বলল, "তুমি আমার জীবন বাঁচিয়েছিলে, শুভ্রা। আজ আমি শুধু আমার বন্ধুর প্রতি কর্তব্য পালন করেছি।"
এই ঘটনার পর তাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হলো। বনের অন্যান্য প্রাণীরাও এই গল্প শুনে বুঝতে পারল, ছোট কাজও বড় উপকারে আসতে পারে। তারা শিখল, বন্ধুত্ব ও সহানুভূতি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ, যা আমাদের একে অপরের সাথে যুক্ত করে রাখে।
এই গল্পটি আমাদের শেখায় যে, কোনো কাজই ছোট নয়। একটি ছোট্ট সহায়তাও কারো জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তাই আমাদের উচিত সর্বদা অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসা, কারণ আমরা জানি না কখন আমাদের সেই সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে।
আপনারা যদি এই ধরনের শিক্ষামূলক গল্প পছন্দ করেন, তাহলে আমাদের ফেসবুক পেজটি লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং ফলো করতে ভুলবেন না। আপনার মতামত আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

🦁 সিংহ ও ইঁদুর 🐭 ঠাকুরমার ঝুলি থেকে নীতিশিক্ষামূলক গল্প

  🦁 সিংহ ও ইঁদুর 🐭 ঠাকুরমার ঝুলি থেকে নীতিশিক্ষামূলক গল্প   একদা এক গভীর জঙ্গলে এক বিশাল সিংহ বাস করত। সে ছিল বনের রাজা, সমস্ত প্রাণী তার ভয়ে কাঁপত। একদিন দুপুরবেলা রাজা সিংহ খেয়ে দেয়ে এক গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ল। এমন সময়, এক ছোট্ট ইঁদুর তার গর্ত থেকে বেরিয়ে এদিক-ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছিল। খেলার ছলেই সে ভুলবশত সিংহের গায়ের উপর চড়ে গেল। এতে সিংহের ঘুম ভেঙে গেল। 😡 ⚡ গর্জন করে সে ইঁদুরটিকে ধরে ফেলল এবং রাগান্বিত স্বরে বলল, 👉 "দুষ্ট ইঁদুর! তুমি এত সাহসী হলে যে আমায় বিরক্ত করছ? এখন আমি তোমাকে খেয়ে ফেলব!" ইঁদুরটি ভয়ে কাঁপতে লাগল এবং হাতজোড় করে বলল, 🙏 "মহারাজ, দয়া করুন! আমি খুবই ছোট্ট আর অসহায়। দয়া করে আমাকে মুক্ত করুন। আমি একদিন আপনার উপকারে আসব!" সিংহ হেসে বলল, 😆 "তুমি এত ছোট একটা প্রাণী! তুমি আবার কীভাবে আমার উপকার করবে?" তবুও, সিংহ দয়ালু হয়ে ইঁদুরটিকে মুক্ত করে দিল । ইঁদুর আনন্দে লাফিয়ে গিয়ে বলল, 🐭 "আপনার এই দয়ার প্রতিদান আমি একদিন দেব, মহারাজ!" ⏳ কিছুদিন পর... সিংহ একদিন বনের মধ্যে শিকারের সন্ধানে ঘুরছিল। হঠাৎ সে এক শিকার...

"বাঘ এসেছিল!|শিশুদের জন্য একটি রহস্যময় বাংলা গল্পIThere Comes the Tiger...

✋ হাতের রেখা বিচার A থেকে Z (Palmistry in Bengali)

    ✋ হাতের রেখা বিচার A থেকে Z (Palmistry in Bengali) 🔠 A থেকে Z বিষয়ভিত্তিক তালিকা: অক্ষর বিষয় বাংলা ব্যাখ্যা A Arjuna Line বিজয়ের রেখা, সাফল্যের প্রতীক B Bracelet Lines কব্জির দাগ, আয়ু ও ভাগ্যের সংকেত C Cross on Palm হাতের ক্রস চিহ্ন – বাধা বা আশীর্বাদ D Destiny Line (ভাগ্যরেখা) কর্মজীবন ও ভাগ্যের দিক নির্ধারণ E Education Line শিক্ষাগত সাফল্যের রেখা F Fate Line কর্মজীবনের উত্থানপতনের রেখা G Girdle of Venus অতিরিক্ত আবেগ বা শিল্পপ্রতিভার চিহ্ন H Heart Line (হৃদয়রেখা) ভালোবাসা ও সম্পর্কের সূচক I Island Sign জীবনে বাধা বা কষ্টের প্রতীক J Jupiter Mount নেতৃত্ব, সম্মান ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা K Ketu Line আধ্যাত্মিকতা ও বিচ্ছিন্নতার রেখা L Life Line (জীবনরেখা) শরীর, স্বাস্থ্য ও আয়ুর ইঙ্গিত M Mystic Cross আধ্যাত্মিক প্রতিভার চিহ্ন N Nail Shape স্বাস্থ্য ও ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে O Om Symbol on Palm আধ্যাত্মিক শক্তির ইঙ্গিত P Palm Shape চার প্রকার – Earth, Air, Fire, Water Palm Q Quadrangle (রেখার ম...