একদিন শুভ্রা গাছের ডালে বসে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করছিল। হঠাৎ তার নজরে পড়ল একটি ছোট্ট পিঁপড়ে, যা নদীর তীরে পানি পান করতে এসেছিল। পিঁপড়েটির নাম ছিল কণা। কণা ছিল পরিশ্রমী ও সাহসী, কিন্তু সেদিন তার জীবনে একটি বিপদ অপেক্ষা করছিল।
পানি পান করতে গিয়ে কণা হঠাৎ পা পিছলে নদীর স্রোতে ভেসে যেতে লাগল। সে বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিল, কিন্তু তার ছোট্ট শরীর স্রোতের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারছিল না। শুভ্রা এই দৃশ্য দেখে উদ্বিগ্ন হলো এবং ভাবতে লাগল কিভাবে কণাকে বাঁচানো যায়।
শুভ্রা দ্রুত একটি পাতা ছিঁড়ে কণার দিকে ফেলে দিল। কণা সেই পাতায় উঠে নিজেকে স্থিতিশীল করল এবং ধীরে ধীরে তীরে পৌঁছাল। তীরে পৌঁছে কণা গভীর শ্বাস নিল এবং শুভ্রার দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠল। সে চিৎকার করে বলল, "ধন্যবাদ, শুভ্রা! তোমার সাহায্য না পেলে আমি আজ বাঁচতাম না।"
শুভ্রা মৃদু হেসে বলল, "বন্ধুর বিপদে সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য। তুমি নিরাপদে আছো, এটাই আমার আনন্দ।"
এই ঘটনার পর কণা ও শুভ্রার মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। তারা প্রতিদিন একে অপরের সাথে সময় কাটাত এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করত। কণা তার দলের অন্যান্য পিঁপড়েদের শুভ্রার সম্পর্কে বলত, আর শুভ্রা অন্যান্য পাখিদের কণার সাহসিকতার গল্প শোনাত।
কিছুদিন পর, একদিন শুভ্রা খাবারের সন্ধানে বনের গভীরে উড়ে গেল। কণা তখন তার দলের সাথে খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ কণার নজরে পড়ল একটি মানুষ, যার হাতে একটি জাল। সে বুঝতে পারল, এই শিকারি বনের কোনো প্রাণীকে ধরার পরিকল্পনা করছে।
কণা শিকারির পিছু নিল এবং দেখতে পেল যে সে শুভ্রার গাছের দিকে যাচ্ছে। শুভ্রা তখনও ফিরে আসেনি, কিন্তু শিকারি গাছের নিচে জাল পাততে শুরু করল। কণা বুঝতে পারল, শিকারির লক্ষ্য শুভ্রা। সে দ্রুত একটি পরিকল্পনা করল।
কণা তার দলের অন্যান্য পিঁপড়েদের ডেকে শিকারির জুতোয় হামলা চালাল। শিকারি হঠাৎ পায়ে তীব্র ব্যথা অনুভব করে চিৎকার করে উঠল এবং জাল ফেলে দিয়ে পা চুলকাতে লাগল। এই সুযোগে কণা ও তার দল জালটি গাছের নিচ থেকে সরিয়ে ফেলল।
শিকারি ব্যথায় কাতর হয়ে বনের বাইরে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর শুভ্রা ফিরে এসে দেখল গাছের নিচে কণা ও তার দল দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, "কণা, এখানে কি ঘটেছে?"
কণা সব কিছু ব্যাখ্যা করল। শুভ্রা কণার বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতায় মুগ্ধ হলো এবং বলল, "তুমি আজ আমার জীবন বাঁচিয়েছ, কণা। তোমার এই ঋণ আমি কখনো ভুলব না।"
কণা মৃদু হেসে বলল, "তুমি আমার জীবন বাঁচিয়েছিলে, শুভ্রা। আজ আমি শুধু আমার বন্ধুর প্রতি কর্তব্য পালন করেছি।"
এই ঘটনার পর তাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হলো। বনের অন্যান্য প্রাণীরাও এই গল্প শুনে বুঝতে পারল, ছোট কাজও বড় উপকারে আসতে পারে। তারা শিখল, বন্ধুত্ব ও সহানুভূতি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ, যা আমাদের একে অপরের সাথে যুক্ত করে রাখে।
এই গল্পটি আমাদের শেখায় যে, কোনো কাজই ছোট নয়। একটি ছোট্ট সহায়তাও কারো জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তাই আমাদের উচিত সর্বদা অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসা, কারণ আমরা জানি না কখন আমাদের সেই সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে।
আপনারা যদি এই ধরনের শিক্ষামূলক গল্প পছন্দ করেন, তাহলে আমাদের ফেসবুক পেজটি লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং ফলো করতে ভুলবেন না। আপনার মতামত আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন