সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

 

১৩৪১ সন, পূজার বন্ধ, আজ মহাষ্টমী। ঠাকুর তখন ফেণী শহরে সুরেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্তীর বাসায়।
সকাল হইতে আকাশের বুকে ঘন কাল মেঘরাশি বর্ষণোন্মুখ অবস্থায় বিরাজমান। শ্রীশ্রীঠাকুর আসিয়া সাজান চেয়ারে আসন গ্রহন করিলে উপস্থিত ভক্তবৃন্দ শ্রীপাদপদ্মে অঞ্জলি প্রদান করিলেন। আকাশের অবস্থা ক্রমেই দুযোগপূণ‌ হইয়া উঠিতেছে দেখিয়া সকলে প্রসাদ পাইয়া চলিয়া গেলেন।
গুরুভাই ফণীবাবু বাড়ি না গিয়ে পাশের বাসায় বন্ধুদের সঙ্গে দাবা খেলিতে শুরু করিলেন। খেলা শেষ হইলে বাহিরের দিকে তাকাইয়া ঊনার চক্ষুস্থির হইয়া গেল। রাস্তাঘাট সব জলমগ্ন। ঘড়িতে তখন পৌনে ৫টা। বৃষ্টি বন্ধ হইয়াছে। ঠাকুরের নিকট গিয়া প্রণাম করিলে ঠাকুর ক্রোধভরে বলিলেন, আপনে এখনও বাড়ি যান নাই কেন? পথঘাট সব ডুইবা গেছে। শিগগির বাড়ি চইলা যান। শ্রীগুরু ভরসা করিয়া তিনি বাড়ি যাত্রা করিলেন। সন্ধ্যা না হইলেও গাঢ় মেঘাচ্ছন্ন আকাশের জন্য তখন সন্ধ্যা বলিয়া প্রতীয়মান হইতেছিল। তিনি তখন দ্রুতবেগে ফাঁড়ি পথে অগ্রসর হইয়া মন্দিয়া নামক দীঘির অগ্নিকোণে উপস্থিত হইলেন। ঝড়তুফানে বহু গাছ পড়িয়া যাওয়ায় ঊনার যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হইয়া গেল। কোন উপায়ান্তর না দেখিয়া দীঘির ভিতর জলের কিনারা দিয়া হাঁটিতে আরম্ভ করিলেন। মাঝামাঝি পর্যন্ত গেলে শুনিতে পান দীঘির অন্য পাড়ের দিক হইতে কিসের শব্দ হইতেছে। পিছন ফিরে তাকাইয়া দেখিলেন সেখানে দীঘির জলের কিনারা হইতে প্রায় ৭/৮ হাত ভিতর দিকে জলস্থিত টকটকি ও পানিফল পাতার উপর হইতে এক অতি বিরাট আকারের সাপ ছোবল মারিয়া মাছ, পোকা মাকড় আহার করিতেছে। ঐ ছোবল পাতায় ও জলে পড়িয়া ঐ শব্দ হইতেছিল। লক্ষ্য করিয়া দেখিলেন সাপটির লেজ দীঘির পাড়ের উপর। এইরকম একটি ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখিয়া ঊনি চলৎশক্তি হারাইয়া অপলক নেত্রে সাপটির দিকে দৃষ্টি স্থির করিয়া ভাবিতেছেন, যদি সাপটি ঊনাকে দেখে তা হইলে উহা আসিয়া হয়তো ঊনাকে গিলিয়া ফেলিবে।
এমন সময় দেখেন সাপটি হটাৎ বিরাট ফণা বিস্তার করিয়া ঊনার দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করিয়া রহিয়াছে। বড় রক্তজবা ফুলের ন্যায় ঘোর রক্তবর্ণ অক্ষি গোলকদ্বয় হইতে আগুন ঠিকরাইয়া পড়িতেছিল। ভাবিলেন বুঝি আর রক্ষা নাই। তিনি পলকহীন নেত্রে সাপের দিকে তাকাইয়া রহিলেন। ভয়ে ঊনার জাগতিক জ্ঞান বিলুপ্ত হইতে চলিয়াছে। সাপটি তদবস্থায় বিদ্যুৎবেগে ঊনার দিকে ছুটিয়া আসিতেছিল। ফণীবাবু অচল, অনড়। নাম মনে নাই। শুধু অনন্য লক্ষে ঠাকুরকে স্মরণ করিয়া চলিতেছেন। সাপটি যখন ফণীবাবুর নিকট হইতে মাত্র হাত পনের দূরে তখনি তিনি “জয় রাম, জয় রাম” বলিয়া চীৎকার দিয়া সজ্ঞানে জলের উপর পড়িয়া যাইতেই মনে হইল ঠাকুর ঊনাকে কোলের উপর রাখিয়া সাপের দিকে তাকাইয়া হাসিতেছেন। ঠাকুরের অতি বৃহদাকার অগ্নিময় নেত্রদ্বয় হইতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বিচ্ছুরিত হইয়া সাপের দিকে ছুটিয়া যাইতেছিল।
সাপটি ঊনাদের নিকট হইতে ৫/৬ হাত দূরে থাকিতে ঠাকুর ফণীবাবুকে দীঘির উত্তর পাড়ের দিকে শূন্যে নিক্ষেপ করিয়া অন্তর্হিত হইলেন।
তিনি উত্তর পাড়ের আরো কিছু উত্তরে গিয়া এক ডোবায় গিয়া পড়িলেন। ঠাকুরের অপার কৃপায় কেবল যে নিশ্চিত মৃত্যু হইতে রক্ষা পাইলেন তাহা নয়, তিনি কোন ব্যাথা-বেদনাও পান নাই। ঐ ডোবা হইতে উঠিয়া গ্রাম্য রাস্তা দিয়া সেইদিন বাড়ি পৌঁছাইলেন।
***********************************************
জয় রাম। জয় গোবিন্দ।। জয় গুরু সত্য নারায়ণ। জয় শ্রীরাম ঠাকুর।।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

🦁 সিংহ ও ইঁদুর 🐭 ঠাকুরমার ঝুলি থেকে নীতিশিক্ষামূলক গল্প

  🦁 সিংহ ও ইঁদুর 🐭 ঠাকুরমার ঝুলি থেকে নীতিশিক্ষামূলক গল্প   একদা এক গভীর জঙ্গলে এক বিশাল সিংহ বাস করত। সে ছিল বনের রাজা, সমস্ত প্রাণী তার ভয়ে কাঁপত। একদিন দুপুরবেলা রাজা সিংহ খেয়ে দেয়ে এক গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ল। এমন সময়, এক ছোট্ট ইঁদুর তার গর্ত থেকে বেরিয়ে এদিক-ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছিল। খেলার ছলেই সে ভুলবশত সিংহের গায়ের উপর চড়ে গেল। এতে সিংহের ঘুম ভেঙে গেল। 😡 ⚡ গর্জন করে সে ইঁদুরটিকে ধরে ফেলল এবং রাগান্বিত স্বরে বলল, 👉 "দুষ্ট ইঁদুর! তুমি এত সাহসী হলে যে আমায় বিরক্ত করছ? এখন আমি তোমাকে খেয়ে ফেলব!" ইঁদুরটি ভয়ে কাঁপতে লাগল এবং হাতজোড় করে বলল, 🙏 "মহারাজ, দয়া করুন! আমি খুবই ছোট্ট আর অসহায়। দয়া করে আমাকে মুক্ত করুন। আমি একদিন আপনার উপকারে আসব!" সিংহ হেসে বলল, 😆 "তুমি এত ছোট একটা প্রাণী! তুমি আবার কীভাবে আমার উপকার করবে?" তবুও, সিংহ দয়ালু হয়ে ইঁদুরটিকে মুক্ত করে দিল । ইঁদুর আনন্দে লাফিয়ে গিয়ে বলল, 🐭 "আপনার এই দয়ার প্রতিদান আমি একদিন দেব, মহারাজ!" ⏳ কিছুদিন পর... সিংহ একদিন বনের মধ্যে শিকারের সন্ধানে ঘুরছিল। হঠাৎ সে এক শিকার...

"বাঘ এসেছিল!|শিশুদের জন্য একটি রহস্যময় বাংলা গল্পIThere Comes the Tiger...

✋ হাতের রেখা বিচার A থেকে Z (Palmistry in Bengali)

    ✋ হাতের রেখা বিচার A থেকে Z (Palmistry in Bengali) 🔠 A থেকে Z বিষয়ভিত্তিক তালিকা: অক্ষর বিষয় বাংলা ব্যাখ্যা A Arjuna Line বিজয়ের রেখা, সাফল্যের প্রতীক B Bracelet Lines কব্জির দাগ, আয়ু ও ভাগ্যের সংকেত C Cross on Palm হাতের ক্রস চিহ্ন – বাধা বা আশীর্বাদ D Destiny Line (ভাগ্যরেখা) কর্মজীবন ও ভাগ্যের দিক নির্ধারণ E Education Line শিক্ষাগত সাফল্যের রেখা F Fate Line কর্মজীবনের উত্থানপতনের রেখা G Girdle of Venus অতিরিক্ত আবেগ বা শিল্পপ্রতিভার চিহ্ন H Heart Line (হৃদয়রেখা) ভালোবাসা ও সম্পর্কের সূচক I Island Sign জীবনে বাধা বা কষ্টের প্রতীক J Jupiter Mount নেতৃত্ব, সম্মান ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা K Ketu Line আধ্যাত্মিকতা ও বিচ্ছিন্নতার রেখা L Life Line (জীবনরেখা) শরীর, স্বাস্থ্য ও আয়ুর ইঙ্গিত M Mystic Cross আধ্যাত্মিক প্রতিভার চিহ্ন N Nail Shape স্বাস্থ্য ও ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে O Om Symbol on Palm আধ্যাত্মিক শক্তির ইঙ্গিত P Palm Shape চার প্রকার – Earth, Air, Fire, Water Palm Q Quadrangle (রেখার ম...