বেদবাণী দ্বিতীয় খন্ড - (৩) পত্রাংশ। শ্রী শ্রী রামঠাকুর।
এই সংসার মায়ামুগ্ধ বশত: বাসনা জালে চরাচর ঘুরিয়া বেড়াইতে হয়। প্রয়োজন বিষয় জানিতে না দিয়া কেবল অনিত্য অভাবেরই সৃষ্টি করিয়া ফেলে। মনে যাহা ভাল বোধ করে তাহাই করিয়া থাকে। তজ্জন্য হিতাহিত বর্জ্জিত হইয়া কেবল বাসনায় বদ্ধ হয়,সংসার ক্ষয় যায় না। কেবল জন্ম মৃত্যুর দন্ড লাভ করে।
. মায়ার জালে আবদ্ধ সংসার:
এই সংসার মায়ার দ্বারা আবদ্ধ, যা মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং সঠিক পথে চলতে বাধা দেয়।
মানুষের বাসনা তাকে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরিয়ে বেড়ায়।
২. প্রকৃত প্রয়োজনকে অবহেলা:
মানুষ প্রকৃত প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো বুঝতে পারে না।
এর পরিবর্তে অস্থায়ী এবং ক্ষণস্থায়ী জিনিসের জন্য ক্রমাগত বাসনার সৃষ্টি করে।
৩. মনের ইচ্ছার অনুসরণ:
মন যা ভালো মনে করে, মানুষ তা-ই করে।
এতে অনেক সময় মানুষের হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়।
৪. বাসনার বন্ধনে আবদ্ধ থাকা:
বাসনা মানুষকে সংসারের জালে বেঁধে রাখে।
এর ফলে মুক্তি লাভ সম্ভব হয় না।
৫. জন্ম-মৃত্যুর চক্র:
মানুষ জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আবদ্ধ থাকে এই আবেগ এবং বাসনার কারণে।
প্রকৃত শান্তি বা মুক্তি লাভ করতে ব্যর্থ হয়।
৬. মুক্তির বার্তা:
শ্রী শ্রী রামঠাকুর মানুষের জন্য প্রকৃত প্রয়োজনীয় বিষয় বুঝতে এবং মায়ার প্রভাব থেকে মুক্ত হতে বলেছেন।
মায়া এবং বাসনা থেকে মুক্তিই আত্মিক উন্নতির পথ।
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের এই পত্রাংশে তিনি মানবজীবনের এক গভীর সত্যকে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন যে এই সংসার মায়ার দ্বারা আবদ্ধ, যেখানে মানুষ বাসনার জালে আটকে থাকে। এই বাসনা মানুষকে এমন এক চক্রে ফেলে দেয় যেখানে সে অনিত্য অভাবের সৃষ্টি করে এবং প্রকৃত প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে বুঝতে ব্যর্থ হয়।
মানুষের মন যা ভালো মনে করে, সে তাই করে। কিন্তু এই ভালো-মন্দের বিচার অনেক সময় হিতাহিত জ্ঞানকে অগ্রাহ্য করে। এর ফলে মানুষ কেবল বাসনার দাস হয়ে যায় এবং সংসারের প্রকৃত মুক্তি লাভ করতে পারে না। এই অবস্থায় মানুষ জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আবদ্ধ থাকে এবং প্রকৃত শান্তি বা মুক্তি লাভ করতে ব্যর্থ হয়।
রামঠাকুর এখানে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, বাসনার এই বন্ধন থেকে মুক্তি পেতে হলে মানুষের উচিত হিতাহিত জ্ঞান অর্জন করা এবং মায়ার প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত করা। তিনি এই পত্রাংশে এক গভীর দার্শনিক বার্তা দিয়েছেন, যা মানুষের আত্মিক উন্নতির পথে দিশা দেখাতে পারে।
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের শেখায় যে মায়া এবং বাসনার বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়ার মাধ্যমে আত্মিক শান্তি এবং প্রকৃত মুক্তি লাভ সম্ভব। তাঁর এই পত্রাংশ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সঠিক পথ অনুসরণ করলে জীবন অনন্ত আলোতে উদ্ভাসিত হতে পারে। এই শিক্ষাগুলো আজও মানুষের জীবনে প্রাসঙ্গিক এবং মূল্যবান।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন