শ্রীশ্রীরামঠাকুরের লীলানুধ্যান:--
*জনৈক ভদ্রলোক যৌবনে সস্ত্রীক কুলগুরুর নিকট দীক্ষা নেন।
কলকাতা এসে তিনি বন্ধুদের ইচ্ছায় অন্য এক গুরুর নিকট দীক্ষা নেন এবং অন্য মন্ত্ৰ পান।
এতেও তার আশা মিটল না। এরপর অন্য কয়েক বন্ধুর সঙ্গে পুরী বেড়াতে গেলেন। সেখানে এক সাধু দর্শনে তাঁর প্রাণ দীক্ষার জন্য ব্যাকুল হয়।
সুতরাং সাধুটির কাছে আবার দীক্ষা নিলেন।
কিছুদিন পর কোন কার্য্যবশত: তিনি কাশী গিয়েছিলেন। অন্য এক নামী সাধুবাবা তাকে স্বেচ্ছায় দীক্ষা প্রদান করলেন এবং চার নম্বর গুরু হলেন।
লোকটি যে এতজন গুরুর নিকট পর পর মন্ত্ৰ নিয়ে এসেছেন একথা কিন্তু পরিবারের কাউকে জানতে দিলেন না।
কিন্তু ভদ্রলোকের মনে তৃপ্তি ও শান্তি নেই। চারজন গুরুর চার রকম মন্ত্ৰ তাকে যেন অবিরাম অশান্তির আগুনে পুড়িয়ে মারছে।
এমন অবস্থায় তিনি এলেন ঠাকুরের কাছে। সমস্ত ঘটনা বিবৃত করে ঠাকুরের চরণ তলে পতিত হলেন।
ঠাকুর বললেন, "আমি কি করব, আপনার নাম ত আমার কাছে নাই।"
লোকটিও নাছোড়বান্দা, ঠাকুরের পা দুটি কিছুতেই ছাড়ছেন না।
হঠাৎ ঠাকুর একটি নাম উচ্চারণ করলেন। ভদ্রলোক চমকে উঠলেন।
বললেন, "এই নামই ত আমি ও আমার স্ত্রী আমাদের কুলগুরুর নিকট পেয়েছিলাম।"
ঠাকুর বললেন, "এটাই আপনার নাম,পরে যা পাইয়াছেন সবই ভূতের মন্ত্রণা।
এই নাম লইয়া পড়িয়া থাকেন, ইহার সেবা পরিচর্য্যা করেন ক্রমে সবই পরিষ্কার হইয়া যাইবে।"
ঠাকুরের কথা শুনিয়া লোকটি বলিলেন--
কুলগুরুটি ঘোর সংসারী। সাধুচিত কিছুই তাঁর নেই। মামলা মোকদ্দমায় তাঁর দ্বিতীয় নেই।
তাছাড়া আরও অনেক রকম অপকর্মে তিনি অতীব সিদ্ধহস্ত। তাই তাঁর উপর ভক্তিশ্রদ্ধা রাখতে পারেন নি।
ঠাকুর বললেন--
"তিনি কি করেন না করেন তাহাতে আপনার কোন প্রয়োজন নাই, আপনার প্রয়োজন নাম।
সেই নাম ত আপনি পাইয়াছেন, তাহা লইয়া থাকেন।
নামের আশ্রয়ে থাকিয়া তাঁহার সেবা করিয়া গেলে ঘরে বসিয়াই সমস্ত পাওয়া যায়। একটু সরল হইয়া থাকিতে হয়, সরলতাই পরম পবিত্র ধর্ম।"
ভদ্রলোক ঠাকুরের উপদেশে কিছুটা আশ্বস্ত হলেন। অন্ধকারের মধ্যে তিনি যেন আলো খুঁজে পেলেন।
কি বিস্ময়কর ব্যবহার ! নিজে কোন নাম দিলেন না। কারণ লোকটির জন্য নাম ঠাকুরের কাছে ছিল না।
তাই কুলগুরুর মন্ত্রটিই তিনি ভদ্রলোকটিকে স্মরণ করিয়ে দিলেন।
ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ সবই দেখেন। কিন্তু থাকেন নির্বিকার।
অথচ আশ্রিতের শরণাগতের রক্ষায় তিনি সর্বদাই তৎপর।
ঘটনাটির ভেতর দিয়ে ঠাকুর তাঁর আশ্রিতজনকে শিক্ষা দিলেন, কুলগুরু যতই অবজ্ঞেয় হউক, তাঁর প্রদত্ত মন্ত্র শিষ্যের মঙ্গলই করে। ব্যতিক্রম হলেই নানা আপদ বিপদ ও উৎপাত উপস্থিত হয়।
টুটুন সেন
=জয়রাম=
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন